অগ্রণী ব্যাংকে কিছু অফিসার নেয়া হবে। ১৪০

অগ্রণী ব্যাংকে কিছু অফিসার নেয়া হবে। ১৪০

অগ্রণী ব্যাংকে কিছু অফিসার নেয়া হবে। এজন্য বাছাই পরীক্ষা ছিলো আজ। সকালে বন্ধু এবং সহযোদ্ধা সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম রিপোর্ট করলেন যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এরপরও সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই পরীক্ষা হলো। হাসান তবুও দমে গেলেন না। তিনি সারাদিন ব্যাপী মুহু মুহু রিপোর্ট করলেন, ফলে বিকেলের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ পরীক্ষাটি বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন। সাংবাদিক হাসানকে অভিনন্দন। একই সাথে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই পরীক্ষাটি বাতিল করার জন্য।
এই ফাঁকে আমি একটি কথা বলতে চাই। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া যেমন একটি বড় সমস্যা, তবে মূল সমস্যা এটি নয়। আসল ঝামেলা অন্যখানে।
অগ্রণী ব্যাংকের প্রশ্নটি দেখলাম। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, হাতির ডাককে কি বলা হয়।
ব্যাংকে চাকরীপ্রার্থীকে কেন জানতে হবে, হাতির ডাককে কি বলা হয়? আমাদের আসল সমস্যা এই জায়গাতেই। একজন ব্যাংকারকে হতে হবে স্মার্ট, স্থিরবুদ্ধি, শীতল মস্তিষ্ক, হিসেবে পাকা, পরিশ্রমী এবং অসীম ধৈর্য্যর অধিকারী। হাতির ডাকে টিক চিহ্ন মেরে যিনি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তিনি বাংলা ব্যাকরণের শিক্ষক হিসেবে ভালো করতে পারেন, ব্যাংকার হিসেবে এটাই কি তার যোগ্যতার মাপকাঠি? হাতির ডাককে কি বলে, ঘোড়ার লেজের অন্য নাম কি, বানরের কান কয়টি- এসব জেনে একজন ব্যাংকার কি করবেন? তাকে কেন প্রাণীবিদ্যা বিষয়ক এক্সপার্ট হতে হবে?
এই রকম হাস্যকর পরীক্ষা ব্যবস্থার ফলও হয় হাস্যকর। একটা উদাহরণ দিই। আমাদের ভোটার আইডি কার্ডে প্রায়ই দেখা যায়, নামধাম ভুল এসেছে। কেন এটি হয়? কারণ নামধাম লেখার কাজে যিনি আছেন, তিনি অতি ”দক্ষ”। তাকেও হাতির ডাক, চাঁদের ওজন, মালয়েশিয়ার রাজার নাম -ইত্যাদি আজগুবি প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে চাকরিটি পেতে হয়েছে। কিন্তু দ্রুত সময়ে কী বোর্ডে নাম লেখার কাজটি তিনি জানেন না, যদিও তার এটাই তার আসল এবং একমাত্র কাজ।
আর সরকারি ব্যাংকের কথা নাইবা বললাম। একেকজন কর্মী গোটা একটি কম্পিউটার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কী বোর্ডের একটি বোতামে টিপ দেবার পর অন্য বোতামটি খুঁজে পেতে তার পাক্কা একটি মিনিট সময় লাগছে। আসলে এটি তার দোষ না। সারা জীবন চাঁদের ওজন আর হাতির ডাক মুখস্থ করতে গিয়ে মাথা তার আর কাজ করে না।
বরং ব্যাংকের পরীক্ষা নেবার সময় সত্যিকারের দক্ষতা যাচাইয়ের কাজটি করুন। পরীক্ষার্থীদের কম্পিউটার দিয়ে বসিয়ে দিন। ১ ঘন্টার পরীক্ষায় যে যতবেশি নির্ভুল ডাটা এন্ট্রি করতে পারবে, সেই যোগ্য।
এবং পরীক্ষার আগে ডাটা এন্ট্রির প্রশ্নও ফাঁস করে দিন। আমাদের ভোটার তালিকাই হচ্ছে ডাটা। এবার পারলে কয়েক কোটি ভোটারের নামধাম মুখস্থ কর । এতে দুটি লাভ। পরীক্ষায় দুর্নীতি শূণ্যতে নেমে আসবে। দ্বিতীয়টি হলো, এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আমাদের তরুণরা সত্যিই কিছু দক্ষতা অর্জন করবে। চাকরিতে টিকুক অথবা নাই টিকুক, এই দক্ষতা তারা অন্যত্র ব্যবহার করতে পারবে।
আমি সবসময় একটি কথা বলি। চুল আচড়ানো বাদ দিয়ে আমাদের মাথার অন্য একটি কাজ আছে। সেটি হচ্ছে, বুদ্ধি খাটানো। হে নিয়োগকর্তারা, চুল আচড়ানোর পাশাপাশি মাথাটি খাটান। আপনারাও বাঁচেন, আমারও বাঁচি।
Collected from the wall of Ashif Entaz Rabi.

Join The Discussion

Compare listings

Compare