প্রশ্ন – বিদেশে ও দেশে খুচরা বিক্রির মদ্ধ পার্থক্য তুলে ধর ?
কাস্তমার সার্ভিস –
অ্যামেরিকাতে আমরা ওয়ালমার্ট থেকে সাধারনত জিনিসপত্র কিনলে তিনমাস পর্যন্ত ফেরত দেয়া যায়। আপনি ব্যাবহার করা জিনিস, প্যাকেট ছাড়া, রিসিপ্ট ছাড়া নিয়ে যাবেন একটা কথাও বলবেনা- এক মিনিটের ভেতর টাকা ফেরত নিয়ে হেটে চলে আসবেন । এরকম সুবিধা আমেরিকার প্রায় সব স্টোরেই পাবেন ।
আমাদের দেশে দোকানে টাকা পে করার পরে দোকানে থাকা অবস্থায়ই আপনি চাইলে আর চেঞ্জ করতে পারবেন না। বদমাশ ফাজিল লোকে ভরা দোকান গুলো- কোনভাবে জোড় করে মিথ্যা বলে বিক্রি করতে পারলেই আপনাকে আর চিনে না। ছোট বেলা আমি একটি শার্টের পিসের দাম দেয়ার পড়ে সেই শাটেড় পিস বদলাতে পাড়ী নাই । আমার আজো মণে আছে টোখোণ আমি ক্লাশ এইটে পড়ি । আমি লাল রঙের একটা সার্ট পিস কিনি পড়ে দেখি কাপর পলেস্তার মানে পিচলা খস্খসে পড়ে আমি সুতি কাপরের সারতের পিস চাই কিন্তু তার এক কথা আপনি এইটা দাম করে নিচেন আপনাকে আতাই নিতে হবে । বিক্রিত মাল ফেরত নেয়া হয় না । অথচ আমি সেই সারতের পিচ কিনে দকানেই বসে আছি । বয়স কম ছিল আমি কান্না করে বলতে ছিলাম কিন্তু সে আমার কথা রাখে নাই । পড়ে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসেচিলাম ।
ব্র্যান্ড শপ –
দেশের ব্রান্ড শপ গুলোর এক কোথায় বাটপাড় । এসি রুমে সুন্দর সেলসম্যান আর বাহারি নামের আড়ালের ডাকাতের দল। আপনি কি জানেন আমেরিকা থেকেও বাংলাদেশে কাপড়ের দাম অনেক ক্ষেত্রে সমান বা বেশি ? ওয়ালমার্ট, জেসি পেনি, কোহল, মেসি যেকোন জায়গা থেকে আপনি ২০-২৫ ডলারে ভালো জিন্স কিনতে পারবেন আমেরিকায় বসে । ১০-১৫ ডলারে শার্ট-শর্টস-টিশার্টস, ২০-৩০ ডলারে ফর্মাল শার্ট। মনে রাখবেন ঢাকা শহরের ব্রান্ড শপের প্রোডাক্ট গুলো থেকে এগুলো অনেক হায়ার কোয়ালিটির । এগুলোও কিন্তু মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাগ লাগানো, এক্সপোর্ট কোয়ালিটি । ঢাকা শহরের কোন লো কোয়ালিটির ব্রান্ড শপেও দুই হাজার টাকার নিচে জিন্স পাবেন না (৩০ ডলার) বিশ্বাস না হলে একদিন গুলসান বনানি সরুম গুলো ঘুরে আসেন ।
কোন ব্র্যান্ড সপে স্যান্ডেল কিনতে গেলে ১ হাজার টাকা , ছয় মাসে ছিড়ে যাবে। আমেরিকায় ৪/৫ ডলারে স্যান্ডেল পাওয়া যায় । ভাল স্যান্ডেল কিনতে চাইলে ২০ ডলার যথেষ্ট, বাংলাদেশে এসব স্যান্ডেল ৩-৪ হাজার টাকা মানে প্রায় ৫০ ডলার । আমি ঢাকায় ৭ হাজার টাকায় স্কেচারসের একজোড়া জুতা কিনেছিলাম, নিউ ইয়র্কে গিয়ে ৩ মাস ও পায়ে দিতে পারি নাই ছিরে গেছে । আমেরিকায় ৩০ ডলার মানে প্রায় ২৫০০ টাকায় আকজরা কেডস কিনেছিলাম ২ বছর পড়ে আর পড়ি নাই কারন পুরাতন হয়ে গেছে কিন্তু ছিরতে পারি নাই । আকানেই শেষ না আমাদের দেশের জিনিসের দাম প্রতিবেসি দেশ ভারত থেকেও অনেক বেশি । ইন্দিয়ার ২ হাজার টাকার ৩ পিস ঢাকায় ৪ হাজার টাকা বিক্রি হয় । এরা কি মানুষ ? এটাকে কি বিজনেস বলে ?
মানুষ কষ্ট করে টাকা আয় করে নিজের ইচ্ছেমতো খরচ করার অধিকার সে রাখে। আমার যতদুর আইডিয়া ওপার বাংলার লোকদের কাছ থেকে শুনে, ইন্ডিয়ায়ও জিনিসের দাম বাংলাদেশ থেকে অনেক কম। আর এখন যাতায়াত সহজ, কয়েক হাজার টাকায়ই ইন্ডিয়া ঘুরে আসা যায়, ভিসা পাওয়াও আগের থেকে সহজ- মানুষ কেনো উচ্চমুল্যে লো-কোয়ালিটির জিনিস কিনবে ঢাকার বাজারে?
দামি রেস্টুরেন্ট –
গুলশানে নাম বলব না , একটা কফি সফে বসে ছিলাম এক কাপ কফির দাম নিয়েছিল মাত্র ৯০০ টাকা । অ্যামেরিকার সেরা কফি ব্র্যান্ড স্টার বাক্সে ৫ ডলারে মানে দেশি ৪০০ টাকায় যে কফি দেয় সেই কফির ঘ্রান ও দেশে কোনদিন পাই নাই । ঢাকায় এক পাংকু রেস্টুরেন্ট এ হাফ তেহারি খেয়েছিলাম দাম নিয়েছিল ১০০০ টাকা । নিউ ইয়র্কে এই তেহারি ৭ ডলারে পাওয়া যায় বুঝলেন ? আমার সোনার বাংলা আমি তমায় ভালবাসি । ম্যাকডোনাল্ডসের সবচেয়ে ভালো বাংগার, সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর কোক সহ ৫ ডলার (৪০০) টাকা। এর সাথে ঢাকা শহরের কোনায় কাঞ্চিতে গজিয়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট গুলোর তুলনা করুন। কি সব ভুজুং ভাজুং বার্গার দেয় দাম তার দাম নাকি ৭০০ টাকা বারিধারায় । আর পিজ্জা !! ঢাকার পিজ্জা দেখলে গা জালা করে, কোয়ালিটি টো নাইই , সবচেয়ে বড় কথা অধিকাংশ পিজ্জা দেখলে সেসব পিজ্জাই মনেহয় না। বেশিরভাগই কোনরকম মোটা ভারী নান রুটির ওপরে সামান্য টমেট চিজ দেয়া একটা অদ্ভুতদর্শন জিনিস, পিজ্জার স্বাদ বাদ দিলাম, ঘ্রান খুজে পাওয়া যাবে না , আর ভেজাল, পচা-বাসি খাবার, দুইনম্বরি, বাটপাড়ি, জোচ্চুরি আর কোয়ালিটির কথা চিন্তা করলে আপনার বমি আসবে । বাংলাদেশের এই বেপারগুল মোটেই ভাল কিছু না ।
মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশে মানুষ কম দামে ভাল জিনিস খুজবে আতাই স্বাভাবিক , টাই এমন চিতারি বাটপারি করে বিজনেসে লাভ করা টো দুরের কথা টিকে থাকাও মুস্কিল হয়ে যাবে । শুধু দোকান বা ব্র্যান্ড ছেরে মানুষ অন্য দকানে বা ব্রান্ডের দিকে যাবে ব্যাপারটা শুধু এমন না , মানুষ এখন কেনা কাতার জন্য বিদেসেও যাচ্ছে । ইন্ডিয়া জাউয়া এখন খুব বেশি কঠিন বা বায়বহুল না । দেশের মানুষ নিয়মিত ভ্রমন, চিকিৎসা ও কেনা কাতার জন্য ভারত যাতায়াত করছে । বিদেশে বিভিন্ন ডে বা উতসব উপলক্ষে নানা রকমের ছার থাকে আর আমাদের দেশে, পুজা, রমজান ও ইদের মধ্য সব জিনিসের দাম বেশি ।
বাংলাদেশ থেকে এবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ নাকি ইন্ডিয়ায় ঈদের শপিং করতে গেছে। বেশ কয়েকটা রিপোর্ট পড়লাম ঢাকা শহরে ঈদের বাজার মন্দাভাব নিয়ে। দেশ ছেড়ে বিদেশে আসলে একটা সুবিধা হচ্ছে অন্য ভাবে চিন্তা করার অভ্যাস হয়। বাংলাদেশে থাকলে এই জিনিসটা নিয়ে রিএক্ট করতাম। মানুষকে দোষ দিতাম। কিন্তু এখন ভাবি মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ক্রিকেট খেলার বাইরে বাংলাদেশিদের সামান্যতম দেশপ্রেম নেই। আর ক্যাপিটালিসিস্টিক মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ক্রেতা সবসময় সস্তা জিনিস খুজবে এটাই স্বাভাবিক। মানুষ যেখানেই সস্তায় পাবে ভাল জিনিস, সেখানেই যাবে। আমেরিকায় বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে স্পেসিফিক জিনিস গুলোতে বিশাল ছাড় থাকে। এখন বাবা দিবস উপলক্ষে, সামার বার বি কিউ উপলক্ষে নানা জিনিস এ প্রচুর ছাড়- আর বঙ্গদেশে ঈদ পুজায় জিনিসের দাম দশগুন বেড়ে যায়। আজকাল মানুষ যদি সস্তায় ইন্ডিয়ায় জিনিস কিনতে যায়- আমি দোষের কিছু দেখি না। আপনার কোয়ালিটি নেই- চুরিবাটপারি জোচ্চুরি করেন- দাম রাখেন আকাশ ছোয়া, এইবার মারা খান । আমার বিশ্বাস ইন্ডিয়া যদি বাংলাদেশের জন্য ভিসা অন আরাইভাল চালু করে বিশ্বাস করেন মানুষ চুল কাটা ব্লেড কেনার জন্য তখন ইন্ডিয়া যাবে সেদিন বুঝবেন ঠেলা । যে দেশের এখনও অনেক মানুষ ৩ বেলা খেটে পায় না। যে দেশে এখনও মানুষ রাস্তায় ঘুমায়, যে দেশে এখনও মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায় সেই দেশে বিজনেসে সেবার নামে খেটে খাউয়া মানুষের মাথায় বাড়ি দেয়ার দিন শেষ । এখনি সময় নিজেদের ভুল থেকে বের হয়ে আসে সঠিক পথে বিজনেস করা ।