মাঝে “ওয়েব ডেভলপার” চেয়ে বিজ্ঞাপন দিলাম। ৬৫

মাঝে “ওয়েব ডেভলপার” চেয়ে বিজ্ঞাপন দিলাম। ৬৫

 

মাঝে “ওয়েব ডেভলপার” চেয়ে বিজ্ঞাপন দিলাম। অনেকেই কাজ জানেন বলে দাবি করেন। কিন্তু ভাইভা নিয়ে দেখা যায়-আমার যা দরকার তা পাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী আছে কিন্তু কাজ শেখে নি। আমি আমার কোম্পানীতে প্রথম যাকে নিয়েছিলাম সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিএসই পাশ করেছে কিন্তু জীবনে কোনোদিন কোনো ওয়েবসাইট বানায় নি। কোনোদিন নিজে কোড করে নি। গুগল এনালাইটিক্স সম্বন্ধেও কোনো ধারণা নেই। সে শুধু কম্পিউটারের হার্ডওয়ার সম্বন্ধে জানে এবং সফটওয়ার ইনস্টল করে বিভিন্ন জায়গায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো-সে ব্রিটিশ উচ্চারণে সবার সাথে কথা বলতে চায় আসলে সেটা নিজ সৃষ্ট ব্রিটিশ ভঙ্গী উচ্চারণ, প্রকৃত নয়। 🙂 যাই হোক, তাকে ছোট করা উদ্দেশ্য নয়। আমি তার কাছে ঋণি। সে আমার প্রথম সময়গুলোতে সঙ্গ দিয়েছিলো। এটাই আমার কাছে অনেক কিছু ছিলো। মাঝে ক্রিয়েটিভ ডিজাইনের লোক খুঁজছিলাম। কাজ জানা লোকের অভাব আছে। শুধু কি ফটোশপ-ইলাস্ট্রেটর জানলেই হয়? ক্রিয়েটিভিটি থাকা লাগবে না? সেন্স অব হিউমার থাকতে হবে না? মেধাবী হতে হবে না? কাজ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকতে হবে না? আপনার বস বলে দিলো-এভাবে করতে হবে আর আপনি করে দিলেন। আর কিছু করা লাগবে না? সিভি জমা দেওয়ার আগে বেতন জানতে হবে। সেখানে আপনার কাজের যোগ্যতা আছে কি নেই সেটা জানতে চেষ্টা করেন না। মার্কেটিং-সেলস হলে করবেন না। ডেস্ক জব দরকার। সময় হবে ৯ টা ৫ টা, মাঝে ১ ঘন্টার লাঞ্চ বিরতি। মাঝে ১ ঘন্টা ঘুমানোর সুযোগ আছে কিনা সেটাও কেউ কেউ বোঝার চেষ্টা করেন। বেতনের টাকাটা আপনি কাজের মাধ্যমে কোম্পানীতে কন্ট্রিবিউশন করতে পেরেছেন কিনা বা পারবেন কিনা সেই খোঁজ নিয়েছেন? কোম্পানী আপনাকে কেনো নেবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন কখনও? সরকারিতে ঘুষ লাগে আর বেসরকারিতে যে মুখ দেখে টাকা দেয় না সেটা জানেন তো? দিন শেষে আপনি কি দিতে পারলেন সেটাই দেখবে কোম্পানী। আর আপনি বেতন বুঝে পেলেন কি না সেটাই দেখবেন, তাই না? তাহলে এর মাঝে যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো একটু দেখেন।

আমি কিছু ছেলে পেয়েছি যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসে। কেউ আসে ২-৩ মাসের জন্য। যেমন–কারও সেমিস্টারের ফি দেওয়া লাগবে বা সেমিস্টার গ্যাপের মধ্যে কিছু আয় করে পরের সেমিস্টারে কাজে লাগাবে বেতনের টাকা। আর ২-৩ মাস যে কোম্পানী ট্রেনিং দিলো সেটার কোনো দাম নেই। কোম্পানী যে সময় ইনভেস্ট করলো আপনার পিছনে তার হিসাব কি কখনও করেছেন? আপনার এই মনের ভিতরকার উদ্দেশ্য তো জানাবেন না। আপনার স্বার্থ ফুরিয়ে গেলেই আপনি চলে যাবেন। আমি ২ জনকে পেয়েছি যারা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে আমার এখানে এসেছিলো চাকরি করতে। অবাক লাগে সত্যি–কতটা বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী হলেই কেবল সেটা সম্ভব হয়েছে। যদিও সেটা ২-৩ দিনেই ধরা পড়েছিলো। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও বন্ডে সই ছাড়া আর কাউকেই নিই না। চরম শিক্ষা হয়ে গেছে।

আমার ফেসবুক লিস্টে অনেকেই আছেন যারা রেফার করেন কাউকে কাউকে। অনেককেই পাই আমি। এক পর্যায়ে সিভিও ইনবক্স করে। পরে যখন ভাইভা কল করি তখন দেখা যায় তারা আসলে কাজেই আগ্রহী না। কোনো এককালে বলে রেখেছিলো। এখন হয়তো সে আর আগ্রহী না। এজন্য সে সত্যিই ফ্রি আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে আমাকে জানাবেন। এসব ক্ষেত্রে আসলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি মাঝে মাঝে।

কিছু ছেলে পেয়েছি যারা চলে যাওয়ার আগে টেকনিক্যালি বেতনটা নিয়েই চলে যায়। যেমন ঈদের আগে কাজ শেষ করে বেতন-বোনাস নিয়ে চলে যায়। আর আপনি জানবেন কখন যে সে চলে গেলো। ঈদের ছুটি শেষে যখন দেখবেন আর সে আসছে না নতুন কোনো অজুহাত দিয়ে। যা আপনাকে নিরবেই মেনে নিতে হবে। অথচ এই হীন কাজের জন্য একটা কোম্পানীর অপূরণীয় ক্ষতি হয় সেটা তারা কখনই বুঝবে না। আপনি চলে যেতে চান যান। কে ধরে রাখে ! যাওয়ার আগে একটি নিয়ম মেনে চলে যান। যাতে কোনো পক্ষই যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রতি ঈদেই মনে হয় বেতনটা আটকে রাখি। কিন্তু এই কোমল হৃদয় সায় দেয় না। বিশ্বাস করতে মন চায়। কিন্তু অবিশ্বাসের একটি বিরাট বটগাছের চারা যে ইতোমধ্যে রোপন হয়ে গেছে তা টেরই পাওয়া দু:স্কর। এই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলা নিয়েই হয়তো কেটে যাবে বাকি জীবনটা। অনেক শিক্ষারই বাকি পড়ে রইলো। নতুন কোনো শিক্ষা নিয়ে সামনে আবার হাজির হবো। এই তো জীবন…..

পুনশ্চ: আমি বড় কোনো ব্যবসায়ী না। লেখা দেখে অনেকেই হয়তো ভাবেন যে কি না কি ! আমি আসলে দিন আনি দিন খাই আর দু একজনকে হয়তো খাওয়ায়। দোআ করবেন যেনো বেশি মানুষকে খাওয়ানোর যোগ্যতা অর্জন করি। পরিশেষে আরকেটি কথা বলি, স্ট্যাটাসটি কারও ঘটনার সাথে মিলে গেলে আমি দু:খিত। নিজের মনে করে নেওয়ার কিছুই নেই। এটা সবার জন্য শিক্ষামূলক হিসাবে উৎসর্গ করলাম। আপনার খারাপ লাগলে এড়িয়ে চলুন। সবাইকে এই দীর্ঘ স্ট্যাটাসটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

© Hadiuzzaman Palak

Join The Discussion

Compare listings

Compare