সচেতনতামূলক পোস্টঃ ১৩৮
গতকাল সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরছি। ফার্মগেটে নেমে ফুটওভারব্রিজটা পেরিয়ে সিনেমা হলের সামনে রিক্সা খুঁজছি। একটা রিক্সাও ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের দিকে যাবে না! অগত্যা হেঁটে আসতে শুরু করলাম। কোচিং সেন্টারগুলো পার হচ্ছি, মোস্তফা গলির অপর পাশে; হুট করে টের পেলাম বিপরীত দিক থেকে আসা একজন ধাক্কা মারল আমাকে। আমি নিজেই সরি বলে হাঁটা দিলাম। লোকটা বলল, শুনে যান। আমি বললাম, বলুন? বলল, সাইডে আসেন। আমি বললাম, সাইডে কেন যাব? সে বলল আপনি ধাক্কা দিবেন আর সরি বলবেন না? আমি বললাম, সরি বলসি ভাই। শুনেন নাই। আর আপনি নিজে রং সাইড দিয়ে আসছেন। সে অগ্নিমূর্তি ধারণ করল। ভাবলাম পাগল বোধহয়। বলল, সরি বলেন। বললাম। খপ করে আমার হাতটা ধরে ফেলল লোকটা। আমি চুপচাপ অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছি। এবার সে ভরপুর ভিরের মাঝে একটা ছুরি তার নিজের কোমরে দেখিয়ে বলল, দিয়ে দে মানিব্যাগ আর মোবাইলটা। আমি বললাম, বের করেন জিনিসটা, ঢুকায় রাখসেন কেন? সত্যি বলতে কি, ভীষণ হকচকিয়ে গিয়েছিলাম আর ভয়ও পাচ্ছিলাম। ভাবছেন, এতো লোকের মাঝে ছুরি দেখিয়ে এসব করা সম্ভব? ফার্মগেট হল ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা। সবাই হুরহুর করে ছুটে যাচ্ছে। ভয়টা কোনমত চাপিয়ে বললাম, এটা দিয়ে যদি আমাকে কিছু করেন, আপনাকে আসেপাশের লোকজন ছেড়ে দিবে? সে বলল, আসেপাশের সব লোক আমার। আমি বললাম, ডাকেন দেখি কয়েকজনকে (ভয় হচ্ছিল, পা কাঁপছিল, ভাবছিলাম যদি চার-পাঁচ জনও তার থাকে, আমাকে তো মিথ্যা কেইসে ফাঁসায় দিতে পারে!)। বুকের সবটুকু সাহস সঞ্চয় করে বললাম, যেখানেই থাকেন খুঁজে বাহির করব আপনাকে আর এক পয়সা দিব না এখন। বাই লাক কথাটা কাজে দিল! সে বলল, ছেড়ে দিলাম যান, গালকাটা কবির! সমস্যা হইলে বইলেন, এই এলাকায় থাকি। আমি দ্রুত গতিতে চলা শুরু করলাম! মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল। তারপরে মিম আর মার্লিনদের সাথে দেখা! ঘটনার আকস্মিকতা ঢাকতে পারিনি বলে ওদের সাথে শেয়ার করিনি।
আজ অফিস থেকে আসবার পথে ফার্মগেটে সিনেমা হলের সামনে দেখি র্যাবের কয়েকটা মোটরবাইক আর একটা পিকআপ দাড়িয়ে আছে। আমার অগ্রজ সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিতেই তারা আগ্রহ নিয়ে সব শুনল। বলল, ভাই আমরা নিজেরাও এসবের জন্য টহলে আছি, আমরাও রিপোর্ট পাইসি। ফার্মগেটে প্রচুর পরিমাণে চাঁদাবাজি, স্মাগ্লিং, ছিনতাই এসব বাড়সে।
আশ্বস্ত হলাম আমাদের আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী বাহিনী ব্যাপারটা দেখছে।
ছোট ভাইবোনেরা যারা এসএসসি-এইচএসসি দিয়ে ঢাকায় এসছেন বা আসতে চাচ্ছেন, অনেকেই ফার্মগেটে থাকবেন হয়তো; কোচিং অনেকেরই ফার্মগেটে। দিনে দুপুরে বিকেলে সন্ধ্যায় এসব ঘটতে পারে।
এক্ষেত্রে যেটা করতে পারেন,
– একাই না বের হয়ে কমপক্ষে দু’জন বের হবার চেস্টা করবেন। ছিনতাইকারীরা একাধিক জনের গ্রুপকে টার্গেট করবে না সাধারণত।
– চলতে ফিরতে চিপাগলি ব্যবহার না করাই ভাল। বিশেষ করে মেয়েদের।
– ডিএমপির হটলাইন, তেজগাঁও থানা, কলাবাগান থানার ফোন নম্বর (আপনি যে থানার আন্ডারে থাকছেন) কন্টাক্ট লিস্টে রাখুন। বাজে পরিস্থিতির শিকার হলে কেউ এগিয়ে আসবে না মনে রাখবেন!
– রাস্তাঘাটে চোখকান খোলা রেখে চলুন। কেউ ঘেঁষতে চাইলে এড়িয়ে চলুন।
– কারও সাথে ধাক্কা লাগলে সরি বলে দ্রুত কেটে পড়ুন। আমার মত চলে না গিয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখলে বিপদ হতে পারে (সৃষ্টিকর্তা বাচিয়ে দিয়েছেন; আলহামদুলিল্লাহ)
– স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র- এসবের আইডি, জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন, ছিনতাইকারীরা খারাপ পরিস্থিতি দেখলে সিন উল্টায় দিতে চায়, মানে আপনাকেই অপরাধী বা চোর প্রমাণের চেষ্টা করতে চাইবে। আইডি থাকলে মানুষ বুঝবে। এটলিস্ট পুলিশ বুঝতে পারবে।
– আত্মীয় মহলে পুলিশে বড় কর্মকর্তা থাকলে তার নাম, পদবী এসব বলে ভয় দেখাতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে কনফিডেন্টলি স্পিচ ডেলিভার দিতে হবে। নাহলে ঘটনা অন্যদিকে গড়াতে পারে।
সবার মঙ্গল হোক। যাদুর শহর ঢাকায় নিরাপদে চলাচল করুন। ধন্যবাদ 🙂
#শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
COLLECTED FROM – The Beauty of DU campus