হাল ছেড়ে দাও বন্ধু!  ৬১

হাল ছেড়ে দাও বন্ধু!  ৬১

বর্ষার বিকেলে আকাশ কালো করে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে, মেঘের গর্জন আর বৃষ্টির ঝংকারে মাতোয়ারা ব্যাঙের দল ঘ্যাঙরঘ্যাঙ রব তুলে নাইতে বেরিয়েছে সদলবলে। মাঠের পারে পুরোনো একটা কুয়ো, তার দেয়ালে সবাই বসে তাইরে নাইরে না গাইছে গলা ছেড়ে, এমন সময় পা পিছলে কিভাবে যেন দুটো ব্যাঙ ঝপাস করে পড়ে গেল কুয়োয়! গান থামিয়ে সবগুলো ব্যাঙ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখে কুয়োর তলে ভাসছে বেচারা ব্যাঙ দুটো।

“কত্তো গভীরে কুয়োর পানি! কোন বাহাদুরেরও সাধ্য নেই এখান থেকে উঠে আসার।” বিরসবদনে বলে উঠলো পালের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাঙটি। সবাই মাথা নাড়লো কথাটি শুনে, ঠিক বলেছে বুড়ো, কুয়োর পানি এত্তো গভীরে, সেখান থেকে লাফ মেরে উঠে আসা চাট্টিখানি কথা নয়! কালচে পানিতে অন্ধকারে প্রায় দেখা যায়না হাপুসহুপুস শব্দে লাফ দিয়ে বেড়াচ্ছে দিশেহারা ব্যাঙ দু’টি, প্রাণপণে চেষ্টা করছে দেয়াল বেয়ে উঠে আসার।

“হাল ছেড়ে দাও বন্ধু! এখান থেকে উঠে আসা সম্ভব নয়, মরতে যদি হবেই খামাখা লাফঝাঁপ করে কী লাভ?” বুড়ো ব্যাঙটি শ্লেষের সুরে বললো গলা ফুলিয়ে। সবাই অবাক হয়ে তাকালো কথাটি শুনে, তারপর কী মনে করে একসাথে মাথা দুলিয়ে বলা শুরু করলো সবাই, “হাল ছেড়ে দাও বন্ধু!” প্রথমে বিড়বিড় করে, তারপর জোরে জোরে, তারপর একদম গলা ফাটিয়ে নেচে নেচে বলতে লাগলো সবাই!

পানিতে এতক্ষণ হুটোপুটি করে শরীর প্রায় অবশ হয়ে এসেছে ব্যাঙ দুটোর, তবুও এই নির্মম কথাটি শুনে কেমন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো একটি ব্যাঙ উপরে নিরাপদে বসে থাকা তার বন্ধুদের দিকে, টের পেল তার শরীর ভার হয়ে আসছে, একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। শেষবারের মতো ঘ্যাং করে অস্ফুট একটা ডাক ছেড়ে তলিয়ে গেল বেচারা, বিস্ফোরিত চোখজোড়ায় একরাশ হতাশা আর অনেকখানি বেদনা নিয়ে, অন্ধকারের অতলে মিলিয়ে গেল চিরদিনের জন্য। অপর ব্যাঙটির অবশ্য কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, সে উন্মাদের মতো লাফিয়ে বেড়াচ্ছে কুয়োজুড়ে।

লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে সবগুলো ব্যাঙের

ব্যাঙগুলো এতক্ষণে যেন একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছে, তারা আরো জোরে জোরে বলতে লাগলো সমস্বরে, “হাল ছেড়ে দাও বন্ধু!” উত্তরে ব্যাঙটা আরো দ্বিগুণ উৎসাহে দাপাদাপি জুড়ে দিল, এবং সবার চোখ ছানাবড়া করে দিয়ে একলাফে উঠে আসলো কুয়োর দেয়ালে! চোখ ঝলমল করছে তার বিশ্বজয়ের আনন্দে, হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে জড়িয়ে ধরলো সে পালের গোদা বুড়ো ব্যাঙটিকে। “কী বলে ধন্যবাদ জানাবো আমি তোমাদের! মৃত্যু আমাকে গ্রাস করতে এসেছিল, তোমরা পুরোটা সময় আমাকে উৎসাহ যুগিয়ে না গেলে অনেক আগেই হয়তো হাল ছেড়ে দিতাম!”

ব্যাঙেরা কথা শুনে হতবাক হয়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে, বুড়ো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলতে যায়, “কিন্তু আমরা তো আসলে..” তার কথা কেড়ে নিয়ে ব্যাঙটি বলে উঠে, “খুব দুঃখের বিষয় আমি কানে শুনতে পাইনা! আজ তোমরা যেভাবে নেচে-গেয়ে উৎসাহ যুগিয়ে গেলে, না জানি কতো অনুপ্রেরণামাখা কথা বলেছ! তোমাদের উৎসাহ দেখে আমার জেদ চেপে গিয়েছিল, কিছুতেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না!” লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে সবগুলো ব্যাঙের, বৃষ্টির কূল ছাপানো কল্লোলে বধির ব্যাঙটি একাই ডেকে ওঠে মনের আনন্দে ঘ্যাঙরঘ্যাঙ শব্দে!

সত্যিই তো, কখনো কখনো তোমার একটি কথা কারো বুকে শূল হয়ে বিঁধতে পারে, যেমনটি ঘটেছে প্রথম ব্যাঙটির ক্ষেত্রে। তাই সবসময় অনুপ্রেরণা যোগাবে সবাইকে, প্রত্যেকটি মানুষের কিছু না কিছু গুণ থাকে সেটিকে উৎসাহ দিবে। তোমার ছোট্ট একটু অনুপ্রেরণা একজন মানুষের জীবন একদম বদলে দিতে পারে, সেটি কখনো ভুলে যেয়ো না। আর যারা তোমাকে হতাশার কথা শোনাবে, তাদের জন্য হয়ে ওঠো দ্বিতীয় ব্যাঙটির মতো! হতাশা একটি বিলাসিতা, সুতরাং কেউ তোমাকে এসব শোনাতে আসলে সেগুলো এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিবে।

collected from – juthi afrin

Join The Discussion

Compare listings

Compare